নিজস্ব প্রতিবেদক :: মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৯০ স্থানে বসানো হবে ১ হাজার ৪২৭টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ২৬৫ কিলোমিটার সড়কপথ নজরদারি করবে হাইওয়ে পুলিশ। এতে এ মহাসড়কে রপ্তানিপণ্য চুরি বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যামেরা বসানোর জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ডাটা সংযোগের জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, এ জন্য মেঘনাঘাটে হাইওয়ে কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার মনিটরিং ও ডাটা সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম জানান, একটি কোম্পানিকে এ জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ক্যামেরাও নিয়ে আসা হয়েছে। কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপনের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পুলিশের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠকে বসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় প্রকল্প পরিচালক এ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের জন্য আহ্বান করা দরপত্র ইতিমধ্যে মূল্যায়ন কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। সুপারিশ করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন ও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।
হাইওয়ে মনিটরিং সিস্টেমের চূড়ান্ত জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি ঠিক করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা এসে গেছে। ডাটা সংযোগোর জন্য বিটিসিএলের সঙ্গে খসড়া চুক্তিনামা চূড়ান্ত করে পাঠানো হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকেও অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম। প্রতিদিনই এই সড়কে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানযোগে বিপুল পরিমাণ পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। কিছুদিন ধরেই মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও সড়কে কাভার্ড ভ্যান থেকে মালপত্র চুরি এবং লুটের অভিযোগ করছিলেন চালক ও মালিকরা।
এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সভাতেই এ মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোপুরি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছে, কে সড়কে গাড়ি নামাল– সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমাদের পুলিশ বাহিনী সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখতে পাবেন কে কী করছে।’
মহাসড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাঁদা বাণিজ্যের কথা আমি বলব না, আমি বলব একটা টোল আছে, সেটা দিতে হবে। সেটা কোথা থেকে নেবে, কীভাবে এবং কত টাকা নেবে, সেটা নির্ধারিত হবে। সেই জায়গা ছাড়া এই টোল কেউ নিতে পারবে না। পরিবহনের যে চাঁদা, যেটা মালিক বা শ্রমিকরা নিয়ে থাকে সমিতি চালানোর জন্য, সেটাও নির্ধারিত রয়েছে। সে চাঁদাও বাস টার্মিনাল বা যেখান থেকে বাস ছাড়ে এর বাইরে কেউ নিতে পারবে না।’
মহাসড়কে অহরহ ঘটছে চুরি-ডাকাতি
দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিমুখী পোশাকপণ্য ঢাকা থেকে বন্দরে যাওয়ার পথে চুরি হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, এ চুরির সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের মালিক, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকের একটি চক্র যুক্ত। এই চক্রের কারণে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
একের পর এক চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি চুরি যাওয়া পণ্য ও দুটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করার পাশাপাশি একটি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার ১৭ হাজার ১৫২টি তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়া হচ্ছিল। পথে পণ্য চুরির ঘটনা ঘটে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় এ নিয়ে একটি মামলা হয়।
ওই ঘটনায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের হোতা অভিযোগে সাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে সিলেটি সাঈদসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি দল।
চুরির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গত ১১ মে জয়ন্তী নিটওয়্যার লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০টি পণ্য জাহাজে তুলতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে পণ্য পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এ জন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটি ওই কারখানাকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড ১ হাজার ৪৩১ কার্টনে ১৭ হাজার ১৫২টি তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালপত্র শিপমেন্টের সময় গুনতে গিয়ে ৫ হাজার পণ্য কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।
তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা থেকে এসব চোরাই পণ্য ও একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করার পাশাপাশি রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুল নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার বুড়িচং নিমসার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আল-আমিন ও দুলাল নামে দুজনকে। তাদের কাছ থেকে চোরাই পোশাক পণ্য ও একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেয়া তথ্য মতে চক্রের হোতা সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদকে।
ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ছয়টি মামলায় দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেছেন। চোরচক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ হাজার বার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটের মৌলভীবাজারে বসবাসকারী সাঈদের রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন তৈরি পোশাক পণ্য জাহাজীকরণের কাজে। দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য চুরির সংঘবদ্ধ একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
চোরাই গার্মেন্টস পণ্য কোথায় বিক্রি হয় এবং কারা এগুলো কিনছে, জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের ছোট ছোট কিছু বাইং হাউসে বিক্রি হয় এসব পণ্য। এসব হাউস বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে তা বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই পণ্য নিউজবাংলা২৪
পাঠকের মতামত: